
২০১৫ সালের ২ জুন ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ছাত্রলীগের বিশাল বহর। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল করার কথা থাকলেও সেই কাউন্সিল না হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি রাঙামাটি ছেড়ে যাওয়ার আগে বিভিন্ন পক্ষের ছয় ছাত্রনেতাকে নিয়ে ছয় সদস্যের কমিটি অনুমোদন দিয়ে যান,যা একদিন পর জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। ওই কমিটিতে আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি,সাইফুল আলম রাশেদ ও নওশাদ সারোয়ার রুমিকে সহসভাপতি,প্রকাশ চাকমাকে সম্পাদক,রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সম্পাদক এবং সালাউদ্দিন টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক আর শাহনেওয়াজ সুমনকে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার আশ্বাস দিয়ে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর পরই জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগের ক্ষুদ্ধ একটি পক্ষ। আরেক পক্ষের পাল্টা প্রতিরোধে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়। এই ঘটনার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষিত কমিটি নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানায় সভাপতি ও সম্পাদক পদে নির্বাচনে নামে বাকী প্রার্থীরা। এ নিয়ে নানান জল ঘোলার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে সব। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠিত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সংগঠনটির ত্যাগি এবং পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা।
একদিকে বয়স পেরিয়ে যাওয়া আর অন্যদিকে কে কোন পদ পাচ্ছেন সেই সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় দৃশ্যত: বেকায়দায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও কোন পদ পদবী না পাওয়ায় বিপাকে অনেকেই।
পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠিত না হওয়ায় মাত্র ৬ সদস্যের ঘোষিত কমিটির ছয় নেতাকে পুরো জেলার ছাত্রলীগের রাজনীতি সামাল দিতে হওয়ার তারাও ঠিকমতো পেরে উঠছেন না। আবার এই ছয়জনের মধ্যে কেউ কেউ আছেন,একেবারের নতুন। ফলে বেশ চাপেই পড়েছেন তারা। অপরিপক্কতার কারণে গত এক বছরে বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ডেও জড়িয়ে গেছেন জেলা কমিটির ছয় সদস্যের কেউ কেউ। এদের কারণে পুরো সংগঠনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় অখুশি আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারাও।
রাঙামাটি ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তারা সবাই চাইছেন দ্রুত জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের জেলা কমিটিতে আসতে পারেন, এমন কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা কমিটি ঘোষিত না হওয়ায় আমরাই পড়েছি বিপাকে। কোন কথা বলতেও পারিনা,সইতেও পারিনা। কারো পক্ষে বা বিপক্ষেও অবস্থান নিতে পারছিনা। আবার নিজের দলীয় পরিচয়ও কাউকে বলতে পারছিনা। এভাবে কিভাবে ছাত্র রাজনীতি করা সম্ভব ?
কেউ কেউ বললেন, বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি ঘোষণা হচ্ছেনা,কদিন পর আবার বলবে আমাদের বয়স শেষ! আমরা দ্রুত রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা জানিয়েছেন, আমরা কমিটির খসড়া মোটামুটি চূড়ান্ত করেছি। এখন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে বসে সেটা চূড়ান্ত করা হবে। আশা করছি আসছে ঈদের পরেই আমরা কমিটি ঘোষণা করতে পারব। তবে আমরা যে খসড়া করেছি,তাতে যাদের নাম এসেছে সেসব পরীক্ষা নীরিক্ষা করছি,কেউ অছাত্র কিনা,কিংবা ছাত্রদল বা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত কিনা,পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি,সেসবও বিবেচনায় নিচ্ছি আমরা। আশা করছি একটা ভালো জেলা কমিটি আমরা ঘোষণা দিতে পারবো।