দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। এ কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক পার্বত্য রাঙামাটিতে বেড়াতে করতে আসে। কিন্তু দিন দিন কাপ্তাই লেক তার পুরনো সৌকর্য যেনো হারাতে বসেছে। কচুরিপানার জঞ্জাল আর মারাত্মক দূষণে প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে হ্রদের চিত্র। কচুরিপানা পঁচে গলে হ্রদের পানিকে যেমন দূষিত করে তুলছে,ফলে হ্রদের পানি ব্যবহার করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হ্রদের প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ভয়াবহভাবে কচুরিপানায় জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদে জমে থাকা কচুরিপানার জঞ্জালে নৌ চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। হ্রদ সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাট অচল হতে বসেছে।
রাঙামাটি শহর ঘিরে থাকা কাপ্তাই হ্রদের বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে এখন কচুরিপানার স্তুপ। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কচুরিপানা এসে হ্রদে একাকার হয়ে গেছে। দীর্ঘ ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাপ্তাই হ্রদের বিশাল এলাকা কচুরিপানার জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে কার্যত অচল হয়ে গেছে রাঙামাটির তবলছড়ি লঞ্চ ঘাট, কাপ্তাই জেটিঘাট ও কাপ্তাই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
রাঙামাটিতে সাপ্তাহিক বাজারে পন্য বিক্রয় করতে আসা লীলাবতি চাকমা বলেন,কচুরিপানার কারনে বোট চলতে পারেনা। পুরো পথ আসতে একঘন্টা লাগলেও ঘাটের কাছে এসে ঘাটে ভীড়তে অন্তত: ৩০/৪০ মিনিট লাগে,কচুরিপানার জঞ্জাল সরিয়ে বোট ভেড়াতে হয়,এতে সময় ও শ্রম নষ্ট হয়।
আরেক বিক্রেতা সাধনমনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,প্রতি সপ্তাহে বাজারে আসতে খুব কষ্ট হয়। কচুরিপানার কারনে বোটের ইঞ্জিন ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যায়। বোটের হুইলার ভেঙ্গে যায়।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাসিন্দাদের পানিয় জল এবং যাবতীয় ব্যবহার্য্য পানির জন্য কাপ্তাই হ্রদ প্রধানতম উৎস। একেতো এই হ্রদের পানি বিশুদ্ধ নয়, তদুপরি এখানে পানি বিশুদ্ধকরণের নেই কোন কার্যকর ও গ্রহনযোগ্য ব্যবস্থা।
রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউপি মেম্বার লোকমান হোসেন বলেন,প্রতিবছর এ লেকে কচুরিপানা চলে আসে। এগুলোর কারনে নৌ-চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
শহরের তবলছড়ি বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব জহির আহম্মেদ সওদাগর বলেন,এগুলো অপসারনের ব্যাপারে আমরা পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে অবহিত করেছি। কিন্তু এরা কেউ দায়িত্ব নিতে রাজি না। কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানা অপসারণে আবেদন নিবেদন করেও কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো বলেন, এখানে সাপ্তাহিক বাজেরর দিন রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাহাড়ীরা বাজারে আসেন কিন্তু কচুরিপানার কারণে তাদের অনেক সমস্যা হয়। তিনি বলেন,যেহেতু বাজারগুলো জেলা পরিষদের বাজারফান্ডের নিয়ন্ত্রনে সেহেতু বাজার সংশ্লিষ্ট ভালোমন্দগুলো দেখার দায়িত্ব অবশ্যই জেলা পরিষদের। তাদের উচিত এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।
কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জঞ্জাল জমে হ্রদে স্বাভাবিক নৌ চলাচল বাধাগ্রস্থ হওয়ায় হ্রদবর্তী উপজেলাগুলোর নৌপযোগাযোগ ব্যহত হচ্ছে। তাই দ্রুত কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।