রেকর্ডিয় জায়গা জোর করে দখলের উদ্দেশ্যে লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সরকারের বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিবন্ধীর ওপর মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে আব্দুল বারেক সরকারকে আসামি করে রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মোসলেম উদ্দীন এই মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরদিন মঙ্গলবার বিকালে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বারেক সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে মোসলেম উদ্দীনের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৭ আগস্ট আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার আমাকে লংগদু আওয়ামীলীগ অফিসে ডেকে এনে আমার নিজ নামে রেকর্ডিয় এক একর পঁয়ত্রিশ শতক জায়গা জোরপূর্বক ৬ লাখ টাকার বিক্রয় করতে বলেন। আমি রাজি না হওয়ার উক্ত অফিসেই আমাকে বেধড়ক প্রহার করেন বারেক সরকার। আমি একজন প্রতিবন্ধি মানুষ, আমার সাত কন্যা সন্তান আছে। তাদের জন্য এই জায়গায়ই আমার একমাত্র সম্বল। কিন্তু বারেক সরকার আমার প্রতিবেশি রুহুল আমিনের পক্ষ নিয়ে এই জায়গা তাকে নিয়ে দিতে যড়যন্ত্র করছে।
মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, বারেক সরকার আমাকে মারার সময় বার বার বলেছেন, মারপিট সবে মাত্র শুরু, জায়গা না বেচলে তোমার কপালে আরও শনি আছে। তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছে, ফলে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি বাড়িতে থাকতে পারছি না। সব সময় আতংকে থাকি, কখন আবার আমার ওপর চড়াও হয়। তিনি বলেন, আমাকে মারার পর আমি লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে সাহস পাইনি, আহত অবস্থা রাঙামাটি এসে জেনারেল হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছি।
মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, বারেক সরকার লংগদু উপজেলা বিএনপি সভাপতি মোঃ নাছির উদ্দিনের পক্ষ নিয়ে আমাকে ভিটে হারা করতে পাঁয়তারা করছে। আমার প্রতিবেশি রুহুল আমিন নাছির উদ্দিনের ভগ্নিপতি। তিনি বলেন, এরা সবাই এক হয়ে আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমার কোটি টাকা দামের জায়গায় নাম মাত্র মূল্য দিয়ে দখল করতে চাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোসলেম আরও বলেল, লংগদু আওয়ামীলীগ অফিসে আমাকে ডেকে এনে বারেক সরকার হুমকি দিয়ে বলেন লংগদুতে আমি যা বলি তাই আইন, তুমি ওদের কাছ থেকে ৬লাখ টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবে, তা না করলে তোমার কপালে দুঃখ আছে। তার এই হুমকিতে আমি শংকিত, বাড়িতে থাকতে পারছি না। জীবনের ভয়ে আমাকে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লংগদু থানায় জিডি করতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।
তবে এই বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে আমি জমির বিষয়টি সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছি। তিনি আরো বলেন, বাদী আওয়ামীলীগের কর্মী ও বিবাদী বিএনপির লোক হলেও আমি দল না দেখে যেটা ন্যায্য সেটা করেছি। কিন্তু আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম ও কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক ষড়যন্ত্র করে ওদেরকে দিয়ে এসব অভিযোগ তুলছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোছলেম উদ্দিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জামাল উদ্দীন, মনির হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন।