নেই রাজ সিংহাসন প্রসাদ। তবে রয়েছে রাজকীয় আচার অনুষ্ঠান এবং রীতি রেওয়াজ। বান্দরবান বোমাং রাজ পরিবার এখনো ধরে রেখেছে রাজকীয় ঐতিহ্য। এখনো প্রজারা রাজা বাহাদুরকে মাথা ঝুকিয়ে প্রণাম করে। প্রতিবছর প্রজাদের কাছ থেকে জুমের বাৎসরিক খাজনা আদায়ের জন্য আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ (পইংজ্রা) উৎসব। শুক্রবার সকালে স্থানীয় রাজারমাঠে চারদিন ব্যাপী রাজপূন্যাহ উৎসবের উদ্বোধনীদিনে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোষাক পরিধান করে রাজবাড়ী থেকে রাজকীয় বাঁশির সুরে অনুষ্ঠানস্থলে নেমে আসেন বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ ১৭তম রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু মারমা। তার সৈন্য-সামন্ত, উজির-নাজির, সিপাহী শালাররা রাজা বাহাদুরকে গার্ড দিয়ে মঞ্চস্থলে নিয়ে যান। বোমাং রাজা সিংহাসনে উপবিষ্ট হলে সারিবদ্ধ ভাবে সারিবদ্ধভাবে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার ৯৫টি মৌজা এবং রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলী দুটি উপজেলার ১৪টি মৌজাসহ মোট ১০৯টি মৌজার হেডম্যান, ৮ শতাধিকেরও বেশি কারবারী, রোয়াজারা রাজাকে কুনিশ করে জুমের বাৎসরিক খাজনা ও উপঢৌকন রাজার হাতে তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাই থোয়াই অং মারমা, জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য, দাতা সংস্থা ইউএনডিপি প্রতিনিধি’সহ সরকারী-বেসরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজপরিবার জানায়, ১৮৭৫ সালে ৫ম তম বোমাং রাজা সাক হ্ন ঞো’র আমল থেকে বংশ পরস্পরায় ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ উৎসব হয়ে আসছে। রাজপূণ্যাহ মেলায় বসেছে নাগর দোলা, সার্কাস, বিচিত্রানুষ্ঠানু, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপসহ ব্যাাতিক্রমি নানা আয়োজন। এছাড়াও হরেক রকম জিনিসপত্রের দোকান এবং সারারাত ব্যাপী চলবে যাত্রা অনুষ্ঠান। রাজপূণ্যাহ উৎসব পরিণত হয়েছে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায়। শুধুমাত্র বান্দরবান, রাঙামাটি নয় রাজপূণ্যাহ মেলা দেখতে ভীড় জমিয়েছেন দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটক।
বোমাং সার্কেল চীফ ১৭তম রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু মারমা বলেছেন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বোমাং সার্কেল’কে লাভজনক এবং অনুন্নত জায়গাটি উন্নত করে তুলতে চাই। জুমের খাজনা বিগত দেড়শ বছরেও বাড়েনি, আগের মতই কর আজও ছয় টাকায় রয়ে গেছে। ভূমি কর বাড়ানো সরকারের উপর নির্ভর করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভূমি কর বাড়ানো দরকার। আদায়কৃত ভূমি কর থেকে আনুপাতিক হারে রাজা, হেডম্যান এবং কার্বারী’রা যতটাকা পাই, তা খুবই অপ্রতুল। এটি কম হলেও আরো দশগুন বাড়াতে হবে। না হলে বর্তমান বাজারের আর্থিক ব্যয়ের কোনোভাবেই সামনজস্য হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি। তিনি (রাজা) আরো বলেন, সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে মৌজা হেডম্যান এবং কার্বারী’দের সম্পৃক্ত করার দাবী জানাচ্ছি। যেহেতু গ্রামের প্রধান কার্বারী এবং মৌজা হেডম্যান, তারাই সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করেন। প্রধান অতিথি গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে সরকার। রাজপূণ্যাহ হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের ঐতিহ্য সংস্কৃতির একটি অংশ। এই অঞ্চলের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেয়া হবে।
বিশেষ অতিথি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, জুমিয়া পরিবারদের কাছ থেকে বাৎসরিক খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে রাজপূণ্যাহ উৎসব আয়োজন। পাহাড়ে অন্যান্য টেক্স আদায়ের ক্ষেত্রে এই ধরণের মেলার আয়োজন করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, বংশ পরাম্পরায় বোমাং রাজ প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের সবচেয়ে বয়জ্যেষ্ঠ পুরুষ রাজা নির্বাচিত হন। ঢাক, ঢোল পিটিয়ে রাজকীয় পদ্ধতিতে দূর্গমাঞ্চলগুলোতেও পূণ্যাহ মেলার বার্তা পৌছিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে।
RAJADER CHODAR TIME KI ACHE RE