ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের রং লেগেছে পাহাড়ে। শতশত ফানুসের রঙে পাহাড়ী শহর বান্দরবানের রঙিন হয়ে উঠেছে রাতের আকাশ। যেন রং লেগেছে পাহাড়ের আকাশে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উৎসবের মূল অনুষ্ঠানমালার শেষদিনে স্থানীয় রাজারমাঠ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের আয়োজনে লাল, সাদা, হলুদ’সহ বিভিন্ন রঙের শতশত ফানুস বাতি আকাশে উড়ানো হয়। সরকারী-বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা’সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনেরা অংশ নেয় প্রবারণা উৎসবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় রাজগুরু বৌদ্ধ ক্যায়াং, সার্বজনীন বৌদ্ধা বিহার’সহ মারমা সম্প্রদায় অধ্যুষিত পাহাড়ী পল্লীগুলো থেকে বিভিন্ন রঙের শতশত ফানুস বাতি উড়ানো হয়।
প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্নিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল। তাই আশ্বিনী পূর্নিমার এই তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস বাতি। পাহাড়ী মারমা সম্প্রদায়েরা নিজস্ব সামর্থ অনুযায়ী ফানুস বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করেন।
মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস: আকাশে উঠার আগেই যে ব্যাক্তির ফানুস মাটিতে পড়ে যায় তাকে পাহাড়ীরা পাপী লোক হিসেবে চিহ্নিত করে। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে ফানুস উড়িয়ে পাহাড়ীরা নিজেদের পাপ মোচন ও পাপী মানুষ খোজে বের করে। একারণে ফানুস আকাশে উড়ানোর সময় পাহাড়ীরা মারমা ভাষায় “সাও দো” “সাও দো” বলতে থাকে,যার অর্থ ‘শুভ মুক্তি’। অপরদিকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’কে ঘিরে বান্দরবানে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ধুম পড়েছে পিঠা তৈরির। পাহাড়ী তরুন-তরুনীরা সাড়িবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশিদের বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করছেন। এদিকে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- ময়ুর রথযাত্রা। বিশাল আকৃতির ময়ুর তৈরী করে তার উপর একটি বুদ্ধ মূতি স্থাপন করে রথটি টেনে টেনে পুরো শহর ঘূরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বির্সজন দেয়া হয়। এসময় বৌদ্ধ ধর্মের নর নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখার জন্য রাস্তর দুপাশে উপচেপড়া ভীড় জমে।
উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। রথ বিসজর্নের মাধ্যমে বান্দরবানে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের তিনদিনের মূল অনুষ্ঠানমালা শেষ হচ্ছে। তবে উৎসব চলবে আরো কয়েকদিন।