দেশে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে পান থেকে চুন কষলেই জনগণ যে বাহিনীকে কটু কথা শোনায়-সেই বাহিনীর নাম পুলিশ। আবার বিপদে পড়লেও নিরাপত্তা কিংবা জীবন বাঁচাতেও ছুঁেট যায় পুলিশের কাছে। দেশের যেকোনো দুর্যোগ ও দুর্ভোগে তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি দৌঁড়াতে হয় আর জবাবদিহিতা করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতেও অন্যান্য বাহিনীর সাথে তাদের ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়।
গোটা দুনিয়া যখন করোনার থাবায় থেমে গেছে তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। আর সেই ভয়-আতঙ্কের মাঝেও দেশের লোকজনদের নিরাপদ ও এই বিপদ থেকে দুরে রাখতে রাত দিন রাস্তায় আর অলি-গলিতে দৌঁড়াচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। অন্তত দুই সপ্তাহ যদি লোকজন নিজেকে গুটিয়ে রাখে তবে মহামারী এই রোগ থেকে অনেকটাই নির্ভয়ে থাকবেন এদেশের মানুষ। বিপদ থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখতে যথেষ্ট বুঝানোর চেষ্টা করছেন এই বাহিনীর সদস্যরা। অনেকেই আবার পিছন থেকে কটু কথাও বলে বেড়ায়। সব কিছু বুঝেও তারা। দেশের মানুষকে ভাল রাখতে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা। কিন্তু যতক্ষণ বুঝায় ততক্ষনই।
তাই আক্ষেপ করে রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ বলেন, রাত দিন আমরা পরিশ্রম করছি। লোকজনকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। এই লোকজনকে ঘরের মধ্যে ঢুকাচ্ছি আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। রীতিমত যেন আমাদের সঙ্গে মশকরা শুরু করেছে। শিক্ষিত মানুষরাও এরকম আচরণ করছে। বুঝতে চেষ্টা করছেনা এই ভাইরাস কতটা ভয়ংকর। কি ভয়ানক পরিনতি অপেক্ষা করছে। ওষুধ আনার কথা বলে কেউ বা কাঁচা বাজারের কথা বলে বেরিয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই একই লোক বের হচ্ছে। দশদিনের বাজার একসাথে করে কি ঘরের মধ্যে থাকা যায়না। জানি লোকজন গালিও দিচ্ছে। তারপরেও বলি আপনারা ঘরে থাকেন, নিরাপদে থাকেন।
জেলা অতিরিক্ত সুপার বলেন, এই সময়টাতে কোনো পুলিশ সদস্যর বাড়িতে যদি অঘটন কিছু ঘটে যায়, তাওতো সে বাড়ি যেতে পারবেনা। আপনি দেখুন সরকারি সব অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের কোনো ছুটি নেই। এই ভয়াবহ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে কিংবা মারা গেলে ঠিকই আমাদেরকেই দৌঁড়ে যেতে হবে। আমাদের কষ্ট টাতো অন্তত বুঝতে হবে। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি-লোকজনদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে রাখতে। সকাল থেকে রাতঅব্দি পুলিশের ডিউটি চলছে। ঠিকমত বিশ্রামের সময়টুকুও পাইনা।
তিনি আরও জানান, জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন সব কর্মকর্তাই রাস্তায় সময় দিচ্ছেন। কেউ ঘরে বসে নেই। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তের মোকাবিলার পাশাপাশি অন্যান্য কাজও তো আমাদের করতে হচ্ছে। অফিসিয়াল কাজও তো আমাদের অনেক। আমাদেরও তো ঘর সংসার আছে। মা বাবা, স্ত্রী সন্তানরাও তো আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আমাদের যারা পরিবার থেকে দূরে আছেন তাদেরওতো পরিবার নিয়ে চিন্তা হয়। এত কিছুর পরেও আমরা দেশ ও দেশের মানুষের সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি।