পার্বত্য এলাকা থেকে বরাবরই সংরক্ষিত কোটায় নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ভাগ্য বিড়ম্ভিত পাহাড়ের নারীরা। তিন পার্বত্য জেলার সাথে কক্সবাজারকে সংযুক্ত করে দেয়ায় প্রায় নিয়মিতভাবেই সংরক্ষিত এই আসনটি চলে যাচ্ছে সমুদ্রশহরের নারীদের কাছে। সমুদ্রকণ্যাদের কাছে তাই পাত্তাই পায় পর্বতকন্যারা। যখন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যের কোটা ১৫ জন ছিলো তখনো যা,এখন সেই কোটা বেড়ে ৫০ ও পরিণত হলেও নিয়তি সেই একই পাহাড়ের নারীদের। তবে এবার নানা কারণে পাহাড়ের নারীদের ভাগ্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। নব্বইয়ের দশকের পর মাত্র এক মেয়াদে বান্দরবান থেকে মাম্যাচিং ছাড়া গত দুইযুগে আর কখনোই পাহাড়ের ভাগ্যে জোটেনি নারী সংসদ সদস্য। এর আগে ১৯৭৩ সালে রাঙামাটি থেকে সুদীপ্ত দেওয়ান বঙ্গবন্ধুর সময় ৭৩ এর প্রথম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি মনোনীত হয়েছিলেন।
সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদেও এই সংরক্ষিত নারী আসনে ( রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবান-কক্সবাজার) এমপি ছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন। এবারো আলোচনায় আছেন তিনি। তার সাথে যোগ হয়েছেন কক্সবাজারের আরো বারোজন নারীনেত্রী।
তবে এবার আর বিনা লড়াইয়ে কক্সবাজারকে ছাড় দিতে রাজি নয় পাহাড়ের নারীনেত্রীরা। তিন পার্বত্য জেলা থেকে তাই এবার ১০ জন নারী নেত্রী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং যথারীতি আজ রবিবার বিকেল ৩ টায় ভাগ্যপরীক্ষায় সাক্ষাৎকার দিতে বসবেন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

রাঙামাটি থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি কাপ্তাই থেকে রাঙামাটি আসার পথে অপহরণের পর গত ২ বছর ধরে নিখোঁজ আওয়ামী লীগ নেতা অনিল তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী সান্তনা চাকমা , জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জেএফ আনোয়ার চিনু,সাবেক সংসদ সদস্য সুদীপ্তা দেওয়ানের কন্যা অপরাজিতা দেওয়ান ও মনোনয়ন নিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাঁশরী চাকমা,দীঘিনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শতরূপা চাকমা,মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বাসন্তী চাকমা,মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ক্রোইসাঞো চৌধুরী,নিগার সুলতানা এবং মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহেনা আক্তার। তিন পার্বত্য জেলা থেকে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বান্দরবান থেকে একমাত্র মনোনয়ন সংগ্রহকারি হলেন সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী সুচিত্রা তঞ্চঙ্গ্যা।
পার্বত্য তিন জেলা থেকে ৯ জন নারী নেত্রী মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিলেও তারা প্রত্যেকেই প্রত্যাশা করছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দিবেন। কিন্তু আবার কক্সবাজার জেলা নিয়ে সংশয়ও কাজ করছে সবার মধ্যে। যদিও তারা সবাই একবাক্যে নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নে কক্সবাজারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আলাদা করার দাবিও জানিয়েছেন।
বান্দরবান সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুচিত্রা তঞ্চঙ্গ্যা পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’কে জানিয়েছেন,কাকে মনোনয়ন দিবেন এটা পুরোই নেত্রীর উপর নির্ভরশীল,নেত্রী যাকে যোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য মনে করবেন নিশ্চয়ই তাকে মনোনয়ন দিবেন। আমিও দলের একজন কর্মী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে আমরা চাই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেই যেনো এবার নারী সংসদ সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়।
একই কথা বললেন,খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবমহিলা লীগের সহ সাধারন সম্পাদক বাঁশরী মারমা। তিনি পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’কে বলেন,নেত্রীকে আমরা অবশ্যই দাবি জানাবো পার্বত্য তিনটি জেলা থেকেই যেনো তিনজন নারীকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়,তা না হলে অন্ততঃ তিন জেলা মিলে একজনকে হলেও যেনো দেয়া হয়। কক্সবাজারের কারণে আমরা আর বঞ্চিত হতে চাইনা। তিনি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনেও নারীদের বিবেচনা করার বিষয়টিও দলীয় সভানেত্রীকে অনুরোধ জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জেএফ আনোয়ার চিনু পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’কে বলেন,সারাজীবন আওয়ামী লীগ করেছি,কলেজ জীবন থেকে শুরু করে জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও আওয়ামী লীগের আদর্শের হাল ছাড়িনি,আমার বিশ্বাস নেত্রী এবার আমাকে মূল্যায়ন করবেন। তিনিও দাবি জানান,পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যেনো প্রতিবারই মনোনয়ন দেয়া হয় এবং কক্সবাজারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত করা না হয়।
এবার সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন পাওয়ার অন্যতম দাবিতার আওয়ামী লীগের ‘নিখোঁজ’ নেতা অনিল তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী সান্তনা চাকমা পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’কে বলেন, আজ দুটি বছর আমার স্বামী নিখোঁজ,আওয়ামী লীগের জন্য আমার স্বামীর অবদান পুরো জেলার মানুষ,দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং নেত্রী নিজেও অবহিত আছেন। এই দেশের জন্য আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছে বীরত্বের সাথে,আমাকে মনোনয়ন দিলে আমার পরিবার ও রাঙামাটি বাসী দলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে এবং আমিও চেষ্টা করবো রাঙামাটির মানুষের জন্য নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করার।
অন্যদিকে পাহাড়ের প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে বরাবরই আলোচনায় আসা সমুদ্রশহর কক্সবাজার থেকে এবারো মনোনয়ন নিয়েছেন ১৩ জন নারী। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক,জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাজনীন সারোয়ার কাবেরি,মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হামিদা তাহের,যুগ্ম সম্পাদক লুৎফুন্নাহার বাপ্পী,যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী আয়েশা সিরাজ,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের স্ত্রী আয়েশা সালাউদ্দিন,আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেনর স্ত্রী ফিরোজা আমজাদ,চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রী,রামু উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইশরাত জাহান মুন্নি,প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হোসেনের কন্যা লুনা ও রামুর শিরিন আকতার। এদের সাথে আছেন ৭ম এবং ৯ম সংসদের সংরক্ষিত কোটার মহিলা সংসদ সদস্য এথিন রাখাইনও।
দুইবারের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেন, আমি দুইবার দায়িত্ব পালন করেছি,সততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করায় নেত্রীও আমার উপর সন্তুষ্ট বলে জানি। এছাড়া আমি দুইবার মহান জাতীয় সংসদে প্যানেল স্পীকার হিসেবেও দায়িত্ব পালণ করেছি। এবার কি করবেন এটা নেত্রীর উপর নির্ভরশীল,নেত্রীর সিদ্ধান্তই সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন,আমরা তাকেই মেনে নিবো।
তবে শেষ পর্যন্ত কে হাসবেন বিজয়ের হাসি,সমুদ্রকন্যাদের হারিয়ে বিজয়মাল্য কি ছিনিয়ে আনতে পারবেন পর্বতকন্যারা,তা জানার জন্য রবিবার বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
AIBAR RANGAMATI PARBOTTHO CHOTTROGRAM THEKEI MOHILA MP HOBE