হঠাৎ করেই সারাদেশের সাথে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়। এরপর শুরু বহু তোড়জোর, বহু কাহিনী। বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি করার জন্য দৌড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের জেলা নেতারা। কিন্তু এতো দ্রুত কি আর সম্মেলন হয়। কোন উপজেলায় সংঘাত,কোথাও মারামারি,কোথাও পন্ড আবার কোথাও স্থগিত উপজেলা সম্মেলন। আবার কোথাও আংশিক কমিটি,কোথাও জেলা থেকেই কমিটি ঘোষণা করে ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়েছে আগামী ২ জুন সম্মেলনে বিদায় নিতে যাওয়া জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব।
শেষাবধি দেখা গেলো ১০ উপজেলার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ তিন উপজেলার সম্মেলনই হলোনা ! ভোটার সংখ্যা,আয়তন কিংবা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায়,এমনকি জেলার রাজনীতিতেও প্রভাবক হিসেবে পরিচিত তিন উপজেলা বাঘাইছড়ি,কাপ্তাই এবং রাঙামাটি। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হলেও বাঘাইছড়িতে দুইপক্ষের বিরোধে সম্মেলন না করেই ফিরে আসতে হয় জেলা নেতাদের। লংগদুতে অজ্ঞাত কারণে ঘোষিত তারিখ পরিবর্তন করেও করা যায়নি সম্মেলন,কাপ্তাইয়ে এক নেতার মায়ের অসুখ এমন অদ্ভূত অজুহাতে হয়নি সম্মেলন।
আবার বরকলে সম্মেলন স্থলেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত: ৫ জন। পন্ড হয়েছে সম্মেলন। আবার শহর সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সভাপতি পদে একজন প্রার্থীর শিক্ষাগতযোগ্যতার কারণে মনোনয়ন বাতিল হলে সৃষ্ট জটিলতায় স্থগিত করা হয় সভাপতি নির্বাচন।
গুরুত্বপূর্ণ এই চার উপজেলায় সম্মেলন না করেই শুক্রবার নেয়া হয় বিচিত্র সব সিদ্ধান্ত। বাঘাইছড়িতে উপজেলা সম্মেলন না করে,এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা না দিয়ে,গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটি আগামী ৩ মাসের মধ্যে সব ইউনিয়নে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি করবে,এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কোন প্রকার গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই লংগদু ও বরকল উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে রাঙামাটি থেকেই। এমনকি রাজস্থলী উপজেলা সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে শহর সম্মেলনে নানা নাটকীয়তার কারণেও বিতর্কিত হয়েছে জেলা কমিটি। আবার বর্তমান জেলা কমিটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ওয়ার্ড সম্মেলনেও নাক গলানোর অভিযোগ উঠে।
জেলা ছাত্রলীগের এমন অদ্ভূদ আর ভুতুরে সব সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ দলের সাধারন নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ,বর্তমান কমিটি যেখানে উপজেলাগুলোর সম্মেলনই ঠিকমতো করতে পারেনা,তারা কি করে একটি জেলা সম্মেলন করবে ! তারা বলছেন,২ জুন দায়সারা সম্মেলন হলেও কোন কাউন্সিল কিংবা নতুন কমিটি হবে বলে মনে হয়না। বিগত কমিটির মতো এবারও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা প্রথম অধিবেশন শেষে রাঙামাটির শীর্ষ নেতার সাথে ‘সৌজন্য সাক্ষাত’ শেষে চলে যাবেন এবং পরে কেন্দ্র থেকেই ঘোষিত হবে কমিটি,এমন শংকার কথাও জানান তারা।
তবে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সাইফুল আলম সাইদুল বলেন,এতো অল্প সময়ে একটি বড় ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন করা সহজ কোন কাজ নয়। তার উপর রাঙামাটির বেশিরভাগ উপজেলা দুর্গম । তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি সবকিছু সুন্দরভাবে করতে। যেসব জায়গায় ছোটখাটো সমস্যা হয়েছে সেখানে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা সম্মেলনেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন,তার আলোকেই সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকই যাই বলুন না কেনো সাধারন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আর এই জেলা কমিটির প্রতি ‘বিশ্বাস ও আস্থা’ রাখতে পারছেন না। তাদের শংকা,আবারো ‘দায়সারা এবং দুর্বল’ আরেকটি কমিটি উপহার পাচ্ছে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ। তবে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ২ জুন সম্মেলনের শেষ বিকেলে।
bastu nestta sangbad prakasar janna dhannabad.