জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম পেয়েছে। আর সেই ‘অপরাধে’ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে ভোরে ২৫ জন পরীক্ষক, নিরীক্ষকসহ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে হাজির করে নিজের মেয়েকে বৃত্তি পাওয়ানোর জন্য চার বিষয়ে খাতায় নম্বর বাড়িয়েছেন। তাঁর (জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) ডাকে তাৎক্ষনিক না গেলে সেনাবাহিনী দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ পাননি। ‘দিনটি জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ছিল’ বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান দীঘিনালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার জানিয়েছেন, খাতায় কিছু ভুল ছিল, তাদেরকে দিয়ে সেগুলো সংশোধন করানো হয়েছে। অবশ্য ‘ভুল’ খাতাগুলোর মধ্যে ওই কর্মকর্তার মেয়ে বৃষ্টি পোদ্দারের খাতাও রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ঘটনাটি পুরো দীঘিনালা উপজেলায় মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে,সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার খোরাক হয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তার এই ঘটনা। বিষয়টি শুনে হতবাক হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ায় কোন শিক্ষক নাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেননা।
শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার পর মূল্যায়নের জন্য খাগড়াছড়ি (সদর) উপজেলার খাতা আসে দীঘিনালায় এবং দীঘিনালার খাতা যায় সদর উপজেলায়। ঠিকানা ব্যাবহার না করে কোড নম্বর দেওয়া খাতাগুলো কোন উপজেলার তা কিভাবে সনাক্ত করা গেল এমন প্রশ্নর উত্তরে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র দাবী করেছে; প্রশ্নপত্রের চিঠি বা আবেদনপত্রের উত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ের নাম লেখার কারণে তা বোঝা গেছে। তবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে শিক্ষকদের মধ্য থেকে পরীক্ষক এবং নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের তিন দিন প্রশিক্ষনও করানো হয়।
দীঘিনালা থেকে খাতাগুলো মূল্যায়নের পর জেলা সদরে যথাসময়ে পৌছানো হয়। খাতার নম্বরপত্র এবং টপসীটে ভূল করা হয়েছে জানিয়ে পরীক্ষক, নিরীক্ষকদের নিয়ে উপেজলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বিজয় দিবসের আগের দিন (রবিবার) বিকালে ফোন করে তখনই যেতে বলেন। সে সময় ফোনে হুমকি-ধমকিও দেন, ভয় দেখান চাকুরিচ্যুতিরও। কিন্তু অবরোধের কারনে যাওয়া সম্ভব হবেনা জানালে পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছতে বলেন সবাইকে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূইয়া জানান, পরীক্ষক, নিরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকসহ ২৫ জনকে সাথে নিয়ে সকাল ৭টার মধ্যেই পৌঁছেন তিনি। তখন শীতে শরীর কাঁপছিল। তিনি ৫ মিনিট রোদে দাঁড়ানোর অনুমতি চাইলে ধমক দিয়ে অফিস কক্ষে বসে থাকতে বলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডাও হয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দারের।
পরে কয়েকজন শিক্ষককে দিয়ে কয়েকটি খাতায় পুনঃনম্বর দেওয়ানোর পর ছুটি মেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মুলত ওই কর্মকর্তার মেয়ের খাতায় নম্বর বাড়ানোই ছিল আসল কাজ। সূত্রটি দাবী করেছে, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ে বৃষ্টি পোদ্দারের খাতার পরিচিতি কোড নম্বরের সর্বশেষ হলো-৪৬৬। আর বৃষ্টি পোদ্দার বাংলাতে পেয়েছিল ৬৩,যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০, গণিতে পেয়েছিল ৬৭ সেখানেও করা হয় ৮০, ইংরেজিতে পেয়েছিল ৬৭ তা করা হয়েছে ৯৪ এবং বিজ্ঞানে পেয়েছিল ৭৫ সেখানেও করা হয় ৯৪।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ে বৃষ্টি পোদ্দারের খাতার পরিচিতি কোড নম্বরের সর্বশেষ হলো-৪৬৬। আর বৃষ্টি পোদ্দার বাংলাতে পেয়েছিল ৬৩,যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০, গণিতে পেয়েছিল ৬৭ সেখানেও করা হয় ৮০, ইংরেজিতে পেয়েছিল ৬৭ তা করা হয়েছে ৯৪ এবং বিজ্ঞানে পেয়েছিল ৭৫ সেখানেও করা হয় ৯৪।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘অনৈতিকভাবে আমাদের উপর অন্যায় আচরন করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, ‘খাতা দেখার এখতিয়ার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নাই। কোন অভিযোগ থাকলে অভিভাবক খাতা পুনঃমূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারেন।’ বিষয়টির বিস্তারিত জেনে করনীয় নির্ধারন করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন নম্বরপত্রে কিছু ভুল করা হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখেন সেগুলোর মধ্যে তার মেয়ের খাতও আছে। তাই তাদের ডেকে নিয়ে সেগুলো সংশোধন করানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা আসলেওতো বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা না।’ অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে উঠিয়ে আনার কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছিল, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ছেলে মেয়ের খাতাও রয়েছে, সেগুলোতে ভুল হলে তারা ধরে আনতে পারেন।’
পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা যে কত অধঃপতনে গেছে, তা খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কর্মকান্ডই অনন্য উদাহরণ। ছোটকাল থেকে শুণে আসছিলাম ডিসির ছেলে বলে কথা….এখন দুর্নাম নিজের কাঁধেই নিয়ে নিলের আদর্শ আর বিবেক এর জায়গায় থাকা এই শিক্ষা কর্মকর্তা!!!!!