আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিএনপিতে চলছে বেশ কানাঘুষা আর নানা গুঞ্জন। খাগড়াছড়ি আসনে ২০০৮ সালের প্রার্থী সমীরণ দেওয়ান ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া; এই দু‘জনের কে পাবেন ধানের শীষ, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা। শোনা যায় তৃতীয় আরেক জনের নামও। তিনি অবশ্য সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুইয়ার বড় ভাই বেলায়েত হোসেন ভুইয়া। তবে, বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে মামলায় সাজার কারনে এবারও ওয়াদুদ ভুইয়ার প্রার্থী হবার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। তবে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মীর বিশ্বাস- কেন্দ্র ওয়াদুদ ভুইয়াকেই বিএনপি‘র চুড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন; এতে ভূল হবার কথা নয়। আর সমীরণ দেওয়ান সমর্থকরা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এবারও নেত্রীর কাছে পছন্দের প্রার্থী পাহাড়ী-বাঙ্গালীর কাছে সমান জনপ্রিয় সমীরণ দেওয়ান।
ওয়াদুদ সমর্থিত নেতাকর্মীদের দাবী, অবিসংবাদিত ওয়াদুদ ভাই-ই হবেন বিএনপি‘র সংসদ সদস্য প্রার্থী। এনিয়ে কোন সন্দেহ রাখতে রাজি নন তারা। এমন আত্ববিশ্বাসী তার সমর্থক ও ভক্তরা তাই খুব ফুরফুরে মেজাজে। তাই আন্দোলন-সংগ্রামে, মাঠে-ময়দানে খুবই তৎপর তারা।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে দূর্নীতির অভিযোগে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হন ওয়াদুদ ভুইয়া। পরবর্তীতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে উচ্চ আদালত তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ২০ বছরের সাজা দিলে সেই নির্বাচনে অযোগ্য হন। ওসব মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।
কিন্তু সমীরণ দেওয়ান গ্রুপের নেতারা জানান, জামিনে থাকা এই নেতার পক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপি শামমুল হক বলেন, ‘ওয়াদুদ ভূইয়ার কারনে যখন খাগড়াছড়িতে বিএনপি‘র ব্যাপক ইমেজ সংকট; তখনই সমীরণ দেওয়ান ধানের শীষে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৮৩ হাজার ভোট পান। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে সমীরণ দেওয়ান বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। তার সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায়ও আসতে পারবেনা।’
জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী জাহেদুল আলম বলেন, দূর্নীতির কারনে আদালতে সাজা হওয়া ওয়াদুদ ভুইয়া আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে পারবেননা।’
বিএনপি‘র তরুন নেতা রিয়াজ উদ্দিন রিপন বলেন, ‘ভদ্রমানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত সমীরণ দেওয়ান চান এবার ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে খালেদা জিয়ার মূখ উজ্জল করতে।’
এদিকে ওয়াদুদ ভুইয়ার বড় ভাই ও রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার নামও শোনা যাচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি‘র প্রার্থী হিসেবে। সম্প্রতি বিএনপিতে বঞ্চিত, ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের নিয়ে ভিন্নধারার ‘নাগরিক পরিষদ’ গঠন করার পর থেকে বিষয়টি আরো বেশি আলোচনায় উঠে এসেছে। সংগঠনটির প্রায় ৯৫ ভাগই বিএনপি‘র সরাসরি নেতা অথবা কর্মী বা সমর্থক। এছাড়া নাগরিক পরিষদ গঠনের পর স্থানীয় সকল নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন অথবা যোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার ঘোষনায় এলাকায় গুঞ্জন রটে বিএনপি‘র সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকতে পারেন একসময়ের শক্তিমান সংগঠক বেলায়েত হোসেন ভুইয়াও।
অবশ্য জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবু ইউছুপ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ওয়াদুদ ভূইয়ার মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। ভূইয়ার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপি এরিই মধ্যে ‘গ্রিন সিগনাল’ দিয়েছে। সেজন্য আমরা ভালোভাবেই সাংগঠনিক প্রস্তুুতি নিয়েছি। তবে, দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তারপক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
বিএনপি‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ইলেকশন করতে পারলে ওয়াদুদ ভুইয়াও পারবেন। আইনী বাঁধা নেই।’
নির্বাচন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াদুদ ভুইয়া কারাগারে থেকেই গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহন করেছিলেন। দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থিতা দাখিল করেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে তা খারিজ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, সেই নির্বাচনে ওয়াদুদ ভুইয়ার ভাতিজা দাউদুল ইসলাম ভুইয়া বিএনপি‘র বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় করে ১২ হাজারের কিছু বেশিভোট পান। বিএনপি প্রার্থী সমীরন দেওয়ান ধানের শীষে ভোট পেয়েছিলেন ৬৩ হাজার।
ওয়াদুদ ভুইয়ার প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী আব্দুল মালেক মিন্টু জানান, ‘ওয়াদুদ ভুইয়ার বিরুদ্ধে দূনীর্তির অভিযোগে ২০ বছরের সাজা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। এছাড়া তখনকার নিন্ম আদালতের রায় উচ্চ আদালতে স্থগিত হওয়ায় সেই রায় এখন আর কার্যকর নেই। ফলে মনোনয়পত্র গ্রহন বা নির্বাচনে অংশ নিতে ওয়াদুদ ভুইয়ার আইনগত কোন বাঁধা নেই।’
আরো দেখুন
রাত পোহালেই খাগড়াছড়ি-লামায় ভোট
রাত পোহালেই খাগড়াছড়ি ও লামা পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। শনিবার সকাল ৮ টায় …