পাহাড়িয়া শহর রাঙামাটিতে পাহাড়ই এখন যেনো বড় বিড়ম্বনার অন্য নাম। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনের কারণে জেলা শহরসহ পুরো জেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড়ধস আর পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি ঝুকিপূর্ণ হয়ে আতংকের কারণ হয়ে উঠেছে শহরের প্রবীণ বটবৃক্ষগুলো।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনের কারণে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির এডিসি হিল,রিজার্ভবাজারের উন্নয়ন বোর্ড সড়ক,রাঙামাটি সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের পেছনের পাহাড়,পাবলিক হেলথ এলাকা,শিমুলতলি,পুলিশ লাইন এলাকাসহ আরো কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত: পাঁচ শতাধিক পরিবারকে শহরের ওমদামিয়া জুনিয়ার হাই স্কুল,শহীদ আব্দুল আলী একাডেমি,আমানতবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। শহরের সবচে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা রিজার্ভবাজারে প্রবেশের সড়কটিতে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় গত দুইদিন ধরে মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোন যানবাহন ঢুকছে না ওই এলাকায়। শহরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে ভারি যানবাহনকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
শুধু রাঙামাটি শহরই নয়,কাপ্তাই,বাঘাইছড়ি,লংগদু,কাউখালি থেকেও পাহাড় ধস কিংবা পাহাড়ে ফাটলের সংবাদ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই রাঙামাটির সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার,সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারসহ প্রশাননের পক্ষ থেকে দুর্গতদের আর্থিক ও ত্রান সহায়তা করা হয়েছে। দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কোথাও কেউ আহত বা নিহত না হলেও,প্রতিমুহুর্তেই শংকা যে কোন খারাপ দুর্ঘটনার।
গত কয়েকদিন ধরে ঝুঁকি বেড়েছে,কাপ্তাই সড়ক,রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যৌথ অভিযানের মাধ্যমে ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে কাপ্তাইয়ে ২ টি এবং রাঙামাটি সদরে ৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আশ্রয়কেন্দ্রে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কাপ্তাইয়ে ১২০ টি পরিবার এবং রাঙামাটি সদরে ১৩০ টি পরিবার আশ্রয়ে আছে। সবমিলিয়ে প্রাঢ ৭০০/৮০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। প্রয়োজন হলে তাদের চাহিদা মোতাবেক আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মোস্তফা জামান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোস্তফা জামান আরো জানিয়েছেন,সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো বলেছেন, পৌর এলাকাতেই ঝুঁকিতে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা বেশি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
গত কয়েকবছর ধরেই পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিতভাবে বসত নির্মাণের হার বেড়েছে আশংকাজনকভাবেই। শহরের বিভিন্নস্থানে পাহাড় কেটে এবং পাহাড়ের ঢালে মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে তৈরি হয়েছে সংকট। আর এই মনুষ্যসৃষ্ট সংকটের কারণেই এখন বিপাকে পড়েছে খোদ মানুষই।