বান্দরবানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সারাদেশে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত জাপাকে ছাড় দিতে দলের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু বান্দরবানে এখন আওয়ামীলীগ লড়াই করবে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেই। দলের মনোনীত প্রার্থী বীর বাহাদুরের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয়শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। আর নির্বাচনে বিরোধীদল না থাকায় বীর বাহাদুরের জন্য ‘শক্ত’ প্রতিদ্বন্ধি বলতে এখন দলেরই নেতা প্রসন্ন।
নির্বাচন যাই হোক বীর বাহাদুরের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকায় স্থানীয়রা হিসাব মিলাতে পারছেন না এমন নির্বাচনে প্রসন্ন তঞ্চঙ্গ্যার লাভ কী? দুজনের প্রতিদ্বন্ধিতায় লাভ-ক্ষতির হিসাব মিলাতে পারছে না স্থানীয়রা। নির্বাচনী প্রতীক ভিন্ন হলেও আসনটি আওয়ামীলীগের দখলেই থাকছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমেছেন বীর বাহাদুর (নৌকা) ও প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (টেবিল ঘড়ি)। জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে প্রচারণা শুরু করেন বীর বাহাদুর এবং লামা উপজেলা থেকে প্রচারণা শুরু করেন প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। আওয়ামী মতাদর্শের এ দুই প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন জেলার দুর্গম অঞ্চলগুলো। তবে জয়ের ব্যাপারে সমান আশাবাদী দুজনের কর্মী-সমর্থকরা। ছাত্রনেতা প্রকৃতি বড়–য়া বলেন, ‘প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সংগঠনের দীর্ঘদিনের সভাপতি থাকার সুবাদে নানামুখী কর্মকান্ডে জেলাজুড়ে প্রসন্নের ব্যক্তিগত একটি ইমেজ তৈরি হয়েছে। যা নির্বাচনে প্রসন্ন’কে এগিয়ে নিয়েছে অনেকদূর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘তৃণমূলের লোকজনের ইচ্ছাতেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সংগঠনের সভাপতি পদ থেকেও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও আওয়ামীলীগ ছেড়ে কোথাও যাবো না। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। সংগঠনের ত্যাগী, বঞ্চিত তৃণমূলের লোকেরা আমার সঙ্গেই আছেন। প্রচারণা চালাতে গিয়ে সবকটি জায়গায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গে প্রসন্ন বলেন, আসনটি ধরে রাখতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ইচ্ছাতেই প্রার্থী হয়েছি। লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রসন্ন করেনা। স্বার্থের জন্য যারা রাজনীতি করে তারাই লাভ-ক্ষতির হিসাব নিকাশ কষে। বিগত পাঁচ বছর বান্দরবানের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কিন্তু কোথায় কোনো উন্নয়নটি হয়েছে, তা সংগঠনের লোকেরাই জানে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়ছে আওয়ামীলীগ বিষয়টি ঠিক নয়। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী একজনই বীর বাহাদুর। প্রসন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে তিনি বহিষ্কৃত। প্রসন্নের সঙ্গে যারা যাচ্ছেন তারাও সংগঠন থেকে বহিষ্কার হবে। দলের নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত রেজুলেশনে সেভাবেই লেখা রয়েছে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় লাভ কী তা তিনিই বলতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর বাহাদুরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।